শীতের শুরুতেই ত্বকে ভাতের ফ্যান দিয়ে করে ফেলুন রূপচর্চা ঘরোয়া উপায়ে : সহজ এবং কার্যকরী
শীতের শুরুতে ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক সহজেই প্রাণহীন এবং রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। এই সময়টাতে ভাতের ফ্যানের মতো ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই কার্যকর হতে পারে। ভাতের ফ্যান, যা ভাত রান্নার সময় অবশিষ্ট থাকে, ত্বকের জন্য একটি প্রাকৃতিক এবং সাশ্রয়ী উপায়। এটি ত্বক ময়েশ্চারাইজ করার পাশাপাশি উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে। নিচে ভাতের ফ্যান দিয়ে ত্বকের যত্নের নানা উপায় এবং এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
![]() |
ভাতের ফ্যান |
ভাতের ফ্যানের পুষ্টিগুণ :
ভাতের ফ্যানে আছে ভিটামিন B , প্রোটিন, মিনারেলস, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো ত্বকের কোষগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কে ত্বরান্বিত করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং শুষ্ক তাকে দূর করে। বিশেষ করে, এর স্টার্চ এবং কার্বোহাইড্রেট ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনে।
ভাতের ফ্যান দিয়ে রূপচর্চার উপায় :
১. ত্বক পরিষ্কার করার জন্য ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার :
ভাতের ফ্যান একটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের ময়লা ও ধুলো পরিষ্কার করে ত্বককে সজীব রাখে।
ব্যবহার পদ্ধতি:
ভাত রান্নার পর অবশিষ্ট গরম ফ্যানটি ঠাণ্ডা হতে দিন।
তুলার বল দিয়ে এটি মুখে মাখুন এবং হালকা হাতে মালিশ করুন।
১০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
এটি ত্বককে পরিষ্কার করার পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
২. ফেস প্যাক হিসেবে ভাতের ফ্যান :
ভাতের ফ্যান দিয়ে সহজেই একটি প্রাকৃতিক ফেস প্যাক তৈরি করা যায় , যা ত্বক মসৃণ এবং উজ্জ্বল করে।
উপাদান:
২ চামচ ভাতের ফ্যান
১ চামচ বেসন
১ চামচ মধু
প্রস্তুত প্রণালী এবং ব্যবহার:
সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
এটি সারা মুখে ও গলায় লাগান।
১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
এই ফেস প্যাক ত্বকের রুক্ষতা দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।
৩. টোনার হিসেবে ভাতের ফ্যান :
ত্বকের জন্য টোনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাতের ফ্যান প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ব্যবহার পদ্ধতি:
ভাতের ফ্যান একটি বোতলে সংরক্ষণ করুন।
স্প্রে বোতলে ভরে মুখে স্প্রে করুন বা তুলার সাহায্যে মুখে মেখে নিন।
এটি ত্বকের ছিদ্র টাইট করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে।
৪. ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে :
ভাতের ফ্যান ত্বকের রোদে পোড়া দাগ কমাতে কার্যকর।
ব্যবহার পদ্ধতি:
রোদে পোড়া জায়গায় তুলা দিয়ে ভাতের ফ্যান লাগান।
প্রতিদিন ২-৩ বার এটি করলে দাগ হালকা হয়ে যাবে এবং ত্বকের রঙ সমান হবে।
৫. ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে :
শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা একটি সাধারণ সমস্যা। ভাতের ফ্যান ত্বককে গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে।
ব্যবহার পদ্ধতি:
গোসলের আগে সারা শরীরে ভাতের ফ্যান মাখুন।
১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
এই পদ্ধতি ত্বককে কোমল এবং মসৃণ করে।
৬. বয়সের ছাপ দূর করতে :
ভাতের ফ্যানে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে। এটি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং ত্বককে টানটান রাখে।
ব্যবহার পদ্ধতি:
ভাতের ফ্যানের সাথে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান।
১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
এই পদ্ধতি ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
৭. চুলের যত্নেও ভাতের ফ্যান :
শুধু ত্বক নয় , ভাতের ফ্যান চুলের জন্যও উপকারী। এটি চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুল মসৃণ করে।
ব্যবহার পদ্ধতি:
চুল ধোয়ার পর ভাতের ফ্যান দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
৫ মিনিট রেখে স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এটি চুলকে মজবুত এবং চকচকে করে।
ভাতের ফ্যান ব্যবহারের সময় সতর্কতা :
১. ভাতের ফ্যান দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করবেন না। এটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করুন।
২. যদি ত্বকে কোনো অ্যালার্জি বা জ্বালাপোড়া অনুভব হয়, তবে ব্যবহার বন্ধ করুন।
৩. ফ্যান ব্যবহারের আগে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
শীতকালে ত্বকের যত্নে ভাতের ফ্যান একটি চমৎকার ঘরোয়া উপায়। এটি সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় সবার জন্যই নিরাপদ। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখা সম্ভব। তাই শীতের শুরুতেই ভাতের ফ্যান ফেলে না দিয়ে এটি দিয়ে রূপচর্চা শুরু করুন এবং ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখুন।
Comments
Post a Comment